Welcome to the Official Web Portal of Lakshyavedh Group of Firms

হিসাবশাস্ত্র (একাদশ শ্রেণী) চ্যাপ্টার 17: আর্থিক বিবরণী

হিসাবশাস্ত্র (একাদশ শ্রেণী)

চ্যাপ্টার 17

আর্থিক বিবরণী


Q. 1. আর্থিক বিবরণী (Financial Statements) কাকে বলে?
উত্তর: কোনো কারবারি প্রতিষ্ঠানে হিসাবকলের শেষে উক্ত হিসবকালের আর্থিক কার্যকলাপের ফলাফল এবং প্রকৃত আর্থিক অবস্থা জানার জন্য যে বিবরণীসমূহ প্রস্তুত করা হয় তাকেই আর্থিক বিবরণী বলে।

Q. 2. আর্থিক বিবরণী সমূহের লক্ষ্য এবং গুরুত্ব কী কী?
উত্তর: আর্থিক বিবরণী সমূহের লক্ষ্য এবং গুরুত্বগুলি হল:
ক) মোট লাভ বা মোট ক্ষতি নির্ধারণ করা।
খ) নীট লাভ বা নীট ক্ষতি নির্ধারণ করা।
গ) সম্পত্তি ও দায়সমূহের সঠিক চিত্র তুলে ধরা।
ঘ) আর্থিক ফলাফলের তুলনামূলক বিশ্লেষণে সাহায্য করা।

Q. 3. আর্থিক বিবরণী সমূহের ব্যবহারকারী কারা?
উত্তর: একটি কারবারি প্রতিষ্ঠানের আর্থিক বিবরণী সমূহের তথ্য ব্যবহারকারীদের বা এটির সঙ্গে স্বার্থযুক্ত ব্যক্তিদের দুটি শ্রেণীতে বিভক্ত করা যায় - অভ্যন্তরীণ ব্যবহারকারী এবং বাহ্যিক ব্যবহারকারী।

কোনো কারবারি প্রতিষ্ঠানের আর্থিক বিবরণী সমূহের অভ্যন্তরীণ ব্যবহারকারীরা হল:
ক) মালিক
খ) ব্যবস্থাপনা
গ) কর্মচারী

 কোনো কারবারি প্রতিষ্ঠানের আর্থিক বিবরণী সমূহের বাহ্যিক ব্যবহারকারীরা হল:
ক) পাওনাদার
খ) বিনিয়গকারী
গ) ব্যাংক এবং অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান
ঘ) ক্রেতা
ঙ) বীমা প্রতিষ্ঠান
চ) সরকার
ছ) গবেষক
জ) জনসাধারণ

Q. 4. ক্রয়-বিক্রয় হিসাব (Trading Account) কাকে বলে? এর বৈশিষ্ট্য লিখো।
উত্তর: পণ্য বা সেবা ক্রয়-বিক্রয় থেকে কোনো কারবারি প্রতিষ্ঠানে কত পরিমাণ মোট লাভ বা মোট ক্ষতি হয়েছে, তা জানার জন্য হিসাবকালের শেষে যে হিসাব প্রস্তুত করা হয়, তাকে ক্রয়-বিক্রয় হিসাব বলে।

ক্রয়-বিক্রয় হিসাবের বৈশিষ্ট্য হল:
ক) ক্রয়-বিক্রয় হিসাব কোনো কারবারি প্রতিষ্ঠানের চূড়ান্ত হিসাবাদির প্রথম স্তর। তবে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় স্তর।
খ) এটি একটি নামিক হিসাব।
গ) এই হিসাবটি প্রতি হিসাবকালের শেষে প্রস্তুত করা হয়।
ঘ) এতে কেবলমাত্র মুনাফাজাতীয় আয়ব্যয় লেখা হয়, মূলধনজাতীয় আয়ব্যয় এই হিসাবে আসে না।
ঙ) এই হিসাব থেকে কোনো কারবারি প্রতিষ্ঠানের হিসাবকালের শেষে মোট লাভ বা মোট ক্ষতির পরিমাণ প্রকাশ পায়।
চ) এই হিসাবের অন্তিম জের হিসাবে মোট লাভ বা মোট ক্ষতির পরিমাণ লাভক্ষতি হিসাবে স্থানান্তর করা হয়।

Q. 5. ক্রয়-বিক্রয় হিসাব কেন প্রস্তুত করা হয়?
অথবা,
ক্রয়-বিক্রয় হিসাবের উদ্দেশ্য লিখো।
উত্তর: পণ্য বা সেবা ক্রয়-বিক্রয় থেকে কোনো কারবারি প্রতিষ্ঠানে কত পরিমাণ মোট লাভ বা মোট ক্ষতি হয়েছে, তা জানার জন্য প্রতি হিসাবকালের শেষে ক্রয়-বিক্রয় হিসাব প্রস্তুত করা হয়।

Q. 6. মোট লাভ বা মোট মুনাফা (Gross Profit) কাকে বলে?
উত্তর: প্রারম্ভিক মজুত পণ্যের মূল্য, নীট ক্রয় মূল্য (বা পণ্যের উৎপাদন ব্যয়) এবং অন্যান্য প্রত্যক্ষ খরচের যদি পণ্যের নীট বিক্রয়মূল্য এবং অন্তিম মজুত পণ্যের মূল্যের যোগফলের তুলনায় কম হয় তবে সেই পার্থক্যের অঙ্ককে মোট লাভ বা মোট মুনাফা বলে।

Q. 7. মোট লোকসান বা মোট ক্ষতি (Gross Loss) কাকে বলে?
উত্তর: প্রারম্ভিক মজুত পণ্যের মূল্য, নীট ক্রয় মূল্য (বা পণ্যের উৎপাদন ব্যয়) এবং অন্যান্য প্রত্যক্ষ খরচের যদি পণ্যের নীট বিক্রয়মূল্য এবং অন্তিম মজুত পণ্যের মূল্যের যোগফলের তুলনায় বেশি হয় তবে সেই পার্থক্যের অঙ্ককে মোট লোকসান বা মোট ক্ষতি বলে।

Q. 8. লাভ-ক্ষতি হিসাব (Profit & Loss Account) কাকে বলে? এর বৈশিষ্ট্য লিখো।
উত্তর: কোনো নির্দিষ্ট হিসাবকালে সংঘটিত কারবারি প্রতিষ্ঠানের সব আর্থিক লেনদেনগুলির নীট ফলাফল বা নীট লাভ/ক্ষতি নিরূপণের উদ্দেশ্যে ক্রয়-বিক্রয় হিসাবের মাধ্যমে প্রাপ্ত মোট লাভ বা মোট ক্ষতি এবং অবশিষ্ট নামিক হিসাবগুলির জেরের সাহায্যে হিসাবকালের শেষদিনে যে হিসাব প্রস্তুত করা হয়, তাকে লাভ-ক্ষতি হিসাব বলে।

লাভ-ক্ষতি হিসাবের বৈশিষ্ট্য হল:
ক) লাভ-ক্ষতি হিসাব কোনো কারবারি প্রতিষ্ঠানের চূড়ান্ত হিসাবাদির দ্বিতীয় স্তর। তবে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে তৃতীয় স্তর।
খ) এটি একটি নামিক হিসাব।
গ) এই হিসাবটি প্রতি হিসাবকালের শেষে প্রস্তুত করা হয়।
ঘ) এতে কেবলমাত্র মুনাফাজাতীয় আয়ব্যয় লেখা হয়, মূলধনজাতীয় আয়ব্যয় এই হিসাবে আসে না।
ঙ) এই হিসাব থেকে কোনো কারবারি প্রতিষ্ঠানের হিসাবকালের শেষে নীট লাভ বা নীট ক্ষতির পরিমাণ প্রকাশ পায়।
চ) এই হিসাবের অন্তিম জের হিসাবে নীট লাভ বা নীট ক্ষতির পরিমাণ মূলধন হিসাবে স্থানান্তর করা হয়।

Q. 9. ক্রয়-বিক্রয় হিসাব এবং লাভ-ক্ষতি হিসাবের মধ্যে পার্থক্য লিখো।
উত্তর: ক্রয়-বিক্রয় হিসাব এবং লাভ-ক্ষতি হিসাবের মধ্যে পার্থক্যগুলি হল:

 

ক্রয়-বিক্রয় হিসাব

লাভ-ক্ষতি হিসাব

ক)

ক্রয়-বিক্রয় হিসাব কোনো কারবারি প্রতিষ্ঠানের চূড়ান্ত হিসাবাদির প্রথম স্তর। তবে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় স্তর।

লাভ-ক্ষতি হিসাব কোনো কারবারি প্রতিষ্ঠানের চূড়ান্ত হিসাবাদির দ্বিতীয় স্তর। তবে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে তৃতীয় স্তর।

খ)

এই হিসাব থেকে কোনো কারবারি প্রতিষ্ঠানের হিসাবকালের শেষে মোট লাভ বা মোট ক্ষতির পরিমাণ প্রকাশ পায়।

এই হিসাব থেকে কোনো কারবারি প্রতিষ্ঠানের হিসাবকালের শেষে নীট লাভ বা নীট ক্ষতির পরিমাণ প্রকাশ পায়।

গ)

এই হিসাবের অন্তিম জের হিসাবে মোট লাভ বা মোট ক্ষতির পরিমাণ লাভক্ষতি হিসাবে স্থানান্তর করা হয়।

এই হিসাবের অন্তিম জের হিসাবে নীট লাভ বা নীট ক্ষতির পরিমাণ মূলধন হিসাবে স্থানান্তর করা হয়।

ঘ)

প্রতিষ্ঠানের প্রত্যক্ষ খরচগুলি এই হিসাবের ডেবিট দিকে দেখানো হয়।

প্রতিষ্ঠানের পরোক্ষ খরচগুলি এই হিসাবের ডেবিট দিকে দেখানো হয়।

ঙ)

প্রতিষ্ঠানের প্রত্যক্ষ আয়গুলি এই হিসাবের ক্রেডিট দিকে দেখানো হয়।

প্রতিষ্ঠানের পরোক্ষ আয়গুলি এই হিসাবের ক্রেডিট দিকে দেখানো হয়।


Q. 10. নীট লাভ বা নীট মুনাফা (Net Profit) কাকে বলে?
উত্তর: লাভ-ক্ষতি হিসাবের ডেবিট দিকের যোগফল অপেক্ষা ক্রেডিট দিকের যোগফল বেশি হলে, উভয়দিকের অঙ্কের বিয়োগফলকে নীট লাভ বা নীট মুনাফা বলে।

Q. 11. নীট লোকসান বা নীট ক্ষতি (Net Loss) কাকে বলে?
উত্তর: লাভ-ক্ষতি হিসাবের ডেবিট দিকের যোগফল অপেক্ষা ক্রেডিট দিকের যোগফল কম হলে, উভয়দিকের অঙ্কের বিয়োগফলকে নীট লোকসান বা নীট ক্ষতি বলে।

Q. 12. মোট লাভ ও নিট লাভের মধ্যে পার্থক্য লিখো।
উত্তর: মোট লাভ ও নিট লাভের মধ্যে পার্থক্য হল: 

 

মোট লাভ বা মোট মুনাফা

নীট লাভ বা নীট মুনাফা

ক)

প্রারম্ভিক মজুত পণ্যের মূল্য, নীট ক্রয় মূল্য (বা পণ্যের উৎপাদন ব্যয়) এবং অন্যান্য প্রত্যক্ষ খরচের যদি পণ্যের নীট বিক্রয়মূল্য এবং অন্তিম মজুত পণ্যের মূল্যের যোগফলের তুলনায় কম হয় তবে সেই পার্থক্যের অঙ্ককে মোট লাভ বা মোট মুনাফা বলে।

লাভ-ক্ষতি হিসাবের ডেবিট দিকের যোগফল অপেক্ষা ক্রেডিট দিকের যোগফল বেশি হলে, উভয়দিকের অঙ্কের বিয়োগফলকে নীট লাভ বা নীট মুনাফা বলে।

 

খ)

এটি লাভ-ক্ষতি হিসাবে স্থানান্তরিত করা হয়।

এটি মূলধন হিসাবে অথবা লাভ-ক্ষতি বণ্টন হিসাবে স্থানান্তরিত করা হয়।

গ)

এর থেকে লভ্যাংশ বণ্টন করা যায় না।

এর থেকে লভ্যাংশ বণ্টন করা যায়।


Q. 13. উদবর্তপত্র (Balance Sheet) কাকে বলে? এর বৈশিষ্ট্য লিখো।
উত্তর: কোনো নির্দিষ্ট দিনে কারবারি প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত আর্থিক অবস্থা যথাযথভাবে জানার জন্য কারবারি প্রতিষ্ঠানের সমস্ত সম্পত্তি ও দায়ের যে বিবরণী প্রস্তুত করা হয়, তাকে উদবর্তপত্র বলে।

উদবর্তপত্রের বৈশিষ্ট্য হল:
ক) উদবর্তপত্র দু-তরফা দাখিলা পদ্ধতির কোনো হিসাবখাত নয়, এটি কারবারি প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট দিনে সম্পত্তি ও দায়সমূহের বিবরণী মাত্র।
খ) এটি প্রস্তুত করা হয় কোনো একটি নির্দিষ্ট দিনে, কখনোই নির্দিষ্ট হিসাবকালের জন্য নয়।
গ) এটি কোনো চলমান প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থার প্রকৃত ও সঠিক চিত্র তুলে ধরে।
ঘ) এর দুটি দিক আছে - সম্পত্তি সমূহের দিক ও দায় সমূহের দিক।
ঙ) উদবর্তপত্রের উভয় দিকের যোগফল সর্বদা সমান হয়।
চ) হিসাবখাতের মতো উদবর্তপত্রে ডেবিট ও ক্রেডিট ব্যবহার করা হয় না।

Q. 14. উদবর্তপত্র কি একটি হিসাবখাত?
উত্তর: উদবর্তপত্র দু-তরফা দাখিলা পদ্ধতির কোনো হিসাবখাত নয়, এটি কারবারি প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট দিনে সম্পত্তি ও দায়সমূহের বিবরণী মাত্র।

Q. 15. উদবর্তপত্রের দুটি প্রয়োজনীয়তা বা সুবিধা লিখো।
উত্তর: উদবর্তপত্রের দুটি প্রয়োজনীয়তা বা সুবিধা হল:
ক) এটি কোনো চলমান প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থার প্রকৃত ও সঠিক চিত্র তুলে ধরে।
খ) উদবর্তপত্ থেকে কোনো প্রতিষ্ঠানের সচ্ছলতা বা দীর্ঘকালীন ঋণ পরিশোধ ক্ষমতার একটি চিত্র পাওয়া যায়।

Q. 16. উদবর্তপত্রকে দ্বিতীয় রেওয়ামিল বলা হয় কেন?
উত্তর: উদবর্তপত্র এবং রেওয়ামিল উভয়ের মধ্যে নিম্নলিখিত সাদৃশ্যগুলির জন্য উদবর্তপত্রকে দ্বিতীয় রেওয়ামিল বলা হয়:
ক) উভয়ই হল এক ধরনের বিবরণী, কোনো হিসাবখাত নয়।
খ) উভয়ই খতিয়ানের বিভিন্ন হিসাবখাতের জের নিয়ে প্রস্তুত করা হয়।
গ) উভয়ই নির্দিষ্ট কোনো একটি তারিখে প্রস্তুত করা হয়।
ঘ) উভয়ই পৃথক পৃথক কাগজে প্রস্তুত করা হয়।
ঙ) উভয়েরই দুটি দিকের অঙ্কের যোগফল সমান হয়।

Q. 17. রেওয়ামিল ও উদবর্তপত্রের মধ্যে পার্থক্য লিখো।
উত্তর: রেওয়ামিল ও উদবর্তপত্রের মধ্যে পার্থক্য হল:

 

রেওয়ামিল

উদবর্তপত্র

ক)

এটি ক্রয়-বিক্রয়ের হিসাব এবং লাভ-ক্ষতির হিসাবের আগে প্রস্তুত করা হয়।

এটি ক্রয়-বিক্রয়ের হিসাব এবং লাভ-ক্ষতির হিসাবের পরে প্রস্তুত করা হয়।

খ)

এটি প্রস্তুত করা বাধ্যতমূলক নয়।

এটি প্রস্তুত করা বাধ্যতমূলক।

গ)

এর থেকে প্রতিষ্ঠানের নিয়োজিত মূলধনের পরিমাণ জানা যায় না।

এর থেকে প্রতিষ্ঠানের নিয়োজিত মূলধনের পরিমাণ জানা যায়।

ঘ)

এর সাহায্যে প্রতিষ্ঠানের সঠিক আর্থিক অবস্থা জানা যায় না।

এর সাহায্যে প্রতিষ্ঠানের সঠিক আর্থিক অবস্থা নিরূপণ করা যায়।


Q. 18. উদবর্তপত্রে সম্পত্তি ও দায়সমূহের বিন্যাসকরণ কাকে বলে?
উত্তর: কোনো প্রতিষ্ঠানের কোনো নির্দিষ্ট তারিখের উদবর্তপত্রে বিভিন্ন ধরনের সম্পত্তি ও দায়গুলিকে বিশেষ উদ্দেশ্যে ও সুনির্দিষ্ট নিয়মে সজ্জিত বা বিন্যাসকরণকে উদবর্তপত্রে সম্পত্তি ও দায়সমূহের বিন্যাসকরণ বলে।

Q. 19. উদবর্তপত্রের বিন্যাসকরণ পদ্ধতি কয়টি ও কী কী?
উত্তর: উদবর্তপত্রে সম্পত্তি ও দায়সমূহের বিন্যাসকরণের তিনটি পদ্ধতি আছে:
(১) স্থায়ী অগ্রাধিকার পদ্ধতি (Rigidity Preference Method)
(২) তরল অগ্রাধিকার পদ্ধতি (Liquidity Preference Method)
(৩) মিশ্র পদ্ধতি (Mixed Method)

Q. 20. সম্পত্তি (Assets) কাকে বলে? উদাহরণ দেও।
উত্তর: প্রতিষ্ঠানের দায় মেটাতে পারে এমন বস্তু বা অধিকারই হল সম্পত্তি।
সম্পত্তি বলতে কোনো বস্তু বা সেবার ওপর কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের আইনসংগতভাবে দাবি বা অধিকারকে বোঝায়। তাই ভবিষ্যতে সুযোগ সুবিধা পাওয়া যাবে এমন ব্যয়কে সম্পত্তি বলে।
যেমন: 
সুনাম (Goodwill), পেটেন্ট স্বত্ব (Patent Rights), মজুদ পণ্য (Stock), যন্ত্রপাতি (Machinery), নগদ অর্থ (Cash), দেনাদার (Debtors), বিনিয়োগ (Investment) ইত্যাদি।

Q. 21. সম্পত্তির বৈশিষ্ট্য লিখো।
উত্তর: সম্পত্তির বৈশিষ্ট্যগুলি হল:
ক) সম্পত্তির আর্থিক মূল্য রয়েছে, অর্থাৎ একে অর্থের এককে পরিমাপ করা যায়।
খ) এটি মূলধনজাতীয় ব্যয়ের দ্বারা সৃষ্টি হয়।
গ) এর জের সর্বদা ডেবিট হয়ে থাকে।
ঘ) এটি হল কোনো বস্তু বা বিষয়, ভবিষ্যত সেবা বা সেবা পাওয়ার অধিকার।

Q. 22. সম্পত্তির শ্রেণীবিভাগ করো।
উত্তর: সম্পত্তিকে নিম্নলিখিতভাবে ভাগ করা যায়:
(১) প্রকৃত সম্পত্তি [Real Assets]

প্রকৃত সম্পত্তিকে দুই ভাগে ভাগ করা যায় - স্থায়ী সম্পত্তি বা স্থির সম্পত্তি [Fixed Assets] এবং চলতি সম্পত্তি [Current Assets]

স্থায়ী সম্পত্তি বা স্থির সম্পত্তিকে আবার চার ভাগে ভাগ করা যায়:
(ক) দৃশ্যমান স্থায়ী সম্পত্তি বা স্পর্শনীয় স্থায়ী সম্পত্তি [Tangible Fixed Assets]
(খ) অদৃশ্য স্থায়ী সম্পত্তি বা অস্পর্শনীয় স্থায়ী সম্পত্তি [Intangible Fixed Assets]
(গ) ক্ষয়িষ্ণু স্থায়ী সম্পত্তি [Wasting Fixed Assets]
(ঘ) অক্ষয়িষ্ণু স্থায়ী সম্পত্তি [Non-Wasting Fixed Assets]

চলতি সম্পত্তিগুলি আবার তিন প্রকারের হয়:
(ক) তরল সম্পত্তি [Liquid Assets]
(খ) আবর্তনশীল সম্পত্তি [Floating or Circulating Assets]
(গ) চলতি অদৃশ্যমান সম্পত্তি [Current Intangible Assets]

(২) অলীক সম্পত্তি বা ভুয়ো সম্পত্তি [Fictitious Assets]

(৩) অনিশ্চিত সম্পত্তি বা সম্ভাব্য সম্পত্তি [Contingent Assets]

Q. 23. প্রকৃত সম্পত্তি [Real Assets] কাকে বলে? উদাহরণ দেও।
উত্তর: যে সম্পত্তির ব্যবহার মূল্য বা উপযোগিতা রয়েছে এবং যা মূল্যের বিনিময় ক্রয়-বিক্রয় হয় তাকে প্রকৃত সম্পত্তি বলে।
যেমন: 
সুনাম (Goodwill), যন্ত্রপাতি (Machinery), দেনাদার (Debtors) ইত্যাদি।

Q. 24. স্থায়ী সম্পত্তি বা স্থির সম্পত্তি [Fixed Assets] কাকে বলে? উদাহরণ দেও।
উত্তর: যে সমস্ত সম্পত্তি দীর্ঘস্থায়ী এবং দীর্ঘকাল ব্যবহারের উদ্দেশ্যে ক্রয় করা হয় তাদের স্থায়ী সম্পত্তি বা স্থির সম্পত্তি বলে।
যেমন: 
জমি (Land), বাড়ি (Building), যন্ত্রপাতি (Machinery), আসবাবপত্র (Furniture),  সুনাম (Goodwill), ব্যবসায়িক চিহ্ন (Trade Marks), পেটেন্ট স্বত্ব (Patent Rights), কপি স্বত্ব (Copy Rights) ইত্যাদি।

Q. 25. দৃশ্যমান স্থায়ী সম্পত্তি বা স্পর্শনীয় স্থায়ী সম্পত্তি [Tangible Fixed Assets] কাকে বলে? উদাহরণ দেও।
অথবা,
দৃশ্যমান সম্পত্তি [Tangible Assets] কাকে বলে? উদাহরণ দেও।
উত্তর: যে সমস্ত সম্পত্তির বাস্তব অস্তিত্ব আছে এবং যেগুলি চোখে দেখা যায় ও  স্পর্শ করা যায়, তাদের দৃশ্যমান স্থায়ী সম্পত্তি বা স্পর্শনীয় স্থায়ী সম্পত্তি বলে।
যেমন: 
জমি (Land), বাড়ি (Building), যন্ত্রপাতি (Machinery), আসবাবপত্র (Furniture) ইত্যাদি।

Q. 26. অদৃশ্য স্থায়ী সম্পত্তি বা অস্পর্শনীয় স্থায়ী সম্পত্তি [Intangible Fixed Assets] কাকে বলে? উদাহরণ দেও।
উত্তর: যে সমস্ত সম্পত্তির বাস্তব অস্তিত্ব নেই এবং যেগুলি চোখে দেখা যায় না ও স্পর্শ করা যায় না, তাদের অদৃশ্য স্থায়ী সম্পত্তি বা অস্পর্শনীয় স্থায়ী সম্পত্তি বলে।
যেমন: 
সুনাম (Goodwill), ব্যবসায়িক চিহ্ন (Trade Marks), পেটেন্ট স্বত্ব (Patent Rights), কপি স্বত্ব বা কৃতিস্বত্ব (Copy Rights) ইত্যাদি।

Q. 27. ক্ষয়িষ্ণু স্থায়ী সম্পত্তি [Wasting Fixed Assets] কাকে বলে? উদাহরণ দেও।
উত্তর: যে সকল স্থায়ী সম্পত্তি প্রতিষ্ঠানের আয় অর্জন বা সেবা প্রদানের জন্য ব্যবহার করা হলে ক্রমশঃ হ্রাস পেয়ে অবশেষে নিঃশেষ হয়ে যায় তাদের ক্ষয়িষ্ণু স্থায়ী সম্পত্তি বলে।
যেমন: 
খনি (Mines), বনভূমি (Forests), আসবাবপত্র (Furniture) ইত্যাদি।

Q. 28. অক্ষয়িষ্ণু স্থায়ী সম্পত্তি [Non-Wasting Fixed Assets] কাকে বলে? উদাহরণ দেও।
উত্তর: যে সকল স্থায়ী সম্পত্তি প্রতিষ্ঠানের আয় অর্জন বা সেবা প্রদানের জন্য ব্যবহৃত হলেও ক্ষয়প্রাপ্ত হয় না তাদের অক্ষয়িষ্ণু স্থায়ী সম্পত্তি বলে।
যেমন: 
শর্তহীন জমি (Freehold Land) ইত্যাদি।

Q. 29. চলতি সম্পত্তি [Current Assets] কাকে বলে? উদাহরণ দেও।
উত্তর: যে সকল সম্পত্তি স্বল্প স্থায়ী এবং যা শীঘ্রই অন্য কোনো সম্পত্তি বা নগদ অর্থে (সাধারণত একটি হিসাবকালের মধ্যেই) রূপান্তর করা যায় তাদের চলতি সম্পত্তি বলে।
যেমন: 
মজুদ পণ্য (Stock), দেনাদার (Debtors), প্রাপ্য বিল (Bill Receivable), নগদ অর্থ (Cash), ব্যাংক জমা (Cash at Bank), অগ্রিম প্রদত্ত ব্যয় (Prepaid Expenses), অনাদায়ী আয় (Accrued Incomes) ইত্যাদি।

Q. 30. তরল সম্পত্তি [Liquid Assets] কাকে বলে? উদাহরণ দেও।
উত্তর: যে সকল চলতি সম্পত্তি খুব শীঘ্রই চাওয়া মাত্রই নগদ অর্থে রূপান্তর করা যায় তাদের তরল সম্পত্তি বলে।
যেমন: 
মজুদ পণ্য (Stock), দেনাদার (Debtors), প্রাপ্য বিল (Bill Receivable), নগদ অর্থ (Cash), ব্যাংক জমা (Cash at Bank) ইত্যাদি।

Q. 31. আবর্তনশীল সম্পত্তি [Floating or Circulating Assets] কাকে বলে? উদাহরণ দেও।
উত্তর: যে সকল চলতি সম্পত্তি কারবারে বারবার আবর্তিত হয়ে নিজেদের রূপান্তর ঘটায় তাদেরকে আবর্তনশীল সম্পত্তি বলে।
যেমন: 
মজুদ পণ্য (Stock), দেনাদার (Debtors), প্রাপ্য বিল (Bill Receivable) ইত্যাদি।

Q. 32. চলতি অদৃশ্যমান সম্পত্তি [Current Intangible Assets] কাকে বলে? উদাহরণ দেও।
উত্তর: যে সকল চলতি সম্পত্তির মূল্য বা উপযোগিতা রয়েছে কিন্তু চোখে দেখা যায় না ও হাতে স্পর্শ করা যায় না, তাদের চলতি অদৃশ্যমান সম্পত্তি বলে।
যেমন: 
অগ্রিম প্রদত্ত ব্যয় (Prepaid Expenses), অনাদায়ী আয় (Accrued Incomes) ইত্যাদি।

Q. 33. অলীক সম্পত্তি বা ভুয়ো সম্পত্তি [Fictitious Assets] কাকে বলে? উদাহরণ দেও।
উত্তর: যে সকল সম্পত্তির কোনো উপযোগিতা নেই এবং যাদের বিনিময় মূল্য ও ব্যবহার মূল্য নেই, শুধু নামে মাত্র সম্পত্তি, তাদের অলীক সম্পত্তি বা ভুয়ো সম্পত্তি বলে।
যেমন: 
প্রারম্ভিক ব্যয় বা প্রাথমিক খরচ (Preliminary Expenses), বিলম্বিত মুনাফাজাতীয় ব্যয় (Deferred Revenue Expenditure), শেয়ার বা ঋণপত্র বিলির ব্যয় বা ক্ষতি (Expenses or Losses on Issue of Shares or Debentures), লাভ-ক্ষতির হিসাবের ডেবিট জের (Debit Balance of Profit & Loss A/c) ইত্যাদি।

Q. 34. অনিশ্চিত সম্পত্তি বা সম্ভাব্য সম্পত্তি [Contingent Assets] কাকে বলে? উদাহরণ দেও।
উত্তর: যে সম্পত্তি বর্তমানে প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারে নেই কিন্তু ভবিষ্যতে এটি স্বত্বাধিকারে আসতেও পারে অর্থাৎ ভবিষ্যতে সম্পত্তিতে রুপান্তর হতেও পারে, আবার নাও হতে পারে তাকে অনিশ্চিত সম্পত্তি বা সম্ভাব্য সম্পত্তি বলে।
যেমন: 
শেয়ারের অতলবী অর্থ (Uncalled Share Capital), বিনষ্ট পণ্যের ক্ষতিপূরণের দাবি (মেনে নেওয়ার পূর্বে) (Compensation receivable on goods destroyed but before claim admitted), উৎপাদিত দ্রব্যের অনাদেয় মুনাফা (Unrealised profit on goods produced) ইত্যাদি।

Q. 35. দায় কাকে বলে? এর শ্রেণীবিভাগ করো।
উত্তর: কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান অপর কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে নগদ অর্থ, পণ্য বা সেবার যে অঙ্ক পরিশোধের জন্য দায়বদ্ধ থাকে তাকে দায় বলে।

কোনো প্রতিষ্ঠানের দায় তিন প্রকার হতে পারে - 
(১) বহির্দায় বা বহিরাগত দায় (External Liabilities)

বহির্দায় আবার দু-ধরনের হয়:
(ক) দীর্ঘমেয়াদি দায় বা স্থায়ী দায় (Long-Term Liabilities বা Fixed Liabilities)
(খ) স্বল্পমেয়াদি দায় বা চলতি দায় (Short-Term Liabilities বা Current Liabilities)

(২) অন্তর্দায় বা অভ্যন্তরীণ দায় (Internal Liabilities)

(৩) অনিশ্চিত দায় বা সম্ভাব্য দায় (Contingent Liabilities)

Q. 36. দায়ের বৈশিষ্ট্য লিখো।
উত্তর: দায়ের বৈশিষ্ট্যগুলি হল:
ক) দায়ের আর্থিক মূল্য রয়েছে, অর্থাৎ একে অর্থের এককে পরিমাপ করা যায়।
খ) এটি পরিশোধ করলে সম্পত্তি হ্রাস পায় বা অন্য কোনো দায় সৃষ্টি হয়।
গ) এর জের সর্বদা ক্রেডিট হয়।
ঘ) এটি হল অর্থ প্রদান, পণ্য সরবরাহ ও সেবা প্রদানের এক প্রতিশ্রুতি।

Q. 37.  বহির্দায় বা বহিরাগত দায় (External Liabilities) কাকে বলে? উদাহরণ দেও।
উত্তর: মালিক ছাড়া বাইরের কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে ব্যবসার যে দায় থাকে তাকে বহির্দায় বা বহিরাগত দায় বলে।
যেমন: 
ঋণপত্র (Debentures), ব্যাংক ঋণ (Bank Loan), বন্ধকী ঋণ (Mortgage Loan), পাওনাদার (Creditors), প্রদেয় বিল (Bills Payable), ব্যাংকের জমাতিরিক্তি উত্তোলন (Bank Overdraft), বকেয়া খরচ (Outstanding Expenses), অগ্রিম প্রাপ্ত আয় (Income Received in Advance) ইত্যাদি।

Q. 38. দীর্ঘমেয়াদি দায় বা স্থায়ী দায় (Long-Term Liabilities বা Fixed Liabilities) কাকে বলে? উদাহরণ দেও।
উত্তর: যে সমস্ত দায় দীর্ঘকাল পর পরিশোধযোগ্য, সেই সকল দায়কে দীর্ঘমেয়াদি দায় বা স্থায়ী দায় বলে।
যেমন: 
ঋণপত্র (Debentures), ব্যাংক ঋণ (Bank Loan), বন্ধকী ঋণ (Mortgage Loan) ইত্যাদি।

Q. 39. স্বল্পমেয়াদি দায় বা চলতি দায় (Short-Term Liabilities বা Current Liabilities) কাকে বলে? উদাহরণ দেও।
উত্তর: যে সমস্ত দায় দ্রুত পরিশোধযোগ্য, সেই সকল দায়কে স্বল্পমেয়াদি দায় বা চলতি দায় বলে।
যেমন:
পাওনাদার (Creditors), প্রদেয় বিল (Bills Payable), ব্যাংকের জমাতিরিক্তি উত্তোলন (Bank Overdraft), বকেয়া খরচ (Outstanding Expenses), অগ্রিম প্রাপ্ত আয় (Income Received in Advance) ইত্যাদি।

Q. 40. অন্তর্দায় বা অভ্যন্তরীণ দায় (Internal Liabilities) কাকে বলে? উদাহরণ দেও।
উত্তর: মালিক পক্ষের কাছে প্রতিষ্ঠানের যে দায় থাকে তাকে অন্তর্দায় বা অভ্যন্তরীণ দায় বলে।
যেমন: 
মূলধন (Capital), সঞ্চিতি (Reserves), অবন্টিত মুনাফা (Undistributed Profit) ইত্যাদি।

Q. 41. অনিশ্চিত দায় বা সম্ভাব্য দায় (Contingent Liabilities) কাকে বলে? উদাহরণ দেও।
উত্তর: যে দায় বর্তমানে কোনো দায় নয়, ভবিষ্যতে উদ্ভূত হতেও পারে আবার নাও হতে পারে তাদের সম্ভাব্য দায় বলে।
যেমন: 
ব্যবসার কাছে দাবি করা হলেও এখনো ঋণ বলে স্বীকৃত হয়নি, জামিনদার হিসাবে দায়, আদালতে অমীমাংসিত ক্ষতিপূরণের মামলার দায়, অন্যান্য অর্থ যার জন্য সম্ভাব্যভাবে দায় ইত্যাদি।