Welcome to the Official Web Portal of Lakshyavedh Group of Firms

গল্পের নাম: “তুমি ছিলে আমার সুদের হার”


গল্পের নাম: “তুমি ছিলে আমার সুদের হার”
✍️ সঞ্জয় আগরওয়ালা, জলপাইগুড়ি

সব্যসাচী আর কৃতিকা প্রথম দেখা করেছিল ব্যাঙ্কের ক্যাশ কাউন্টারের লাইনে। কৃতিকার দ্রুততা, হুড়োহুড়ি, চিৎকার – সব কিছুতেই ছিল ঝড়। সব্যসাচী একটু লাজুক, গুছানো। কৃতিকা হেসে বলেছিল,
— "তোমার মতো শান্ত লোকেদের জন্যই তো এই দুনিয়ায় ব্যালান্স থাকে!"

সব্যসাচী মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে ছিল। কৃতিকার সঙ্গে সম্পর্ক জমে উঠলো। কিন্তু সম্পর্কটা যেন একটা কারেন্ট অ্যাকাউন্ট—নিয়মিত ইনফ্লো-আউটফ্লো, আবেগ থাকে না, ব্যালান্স থাকে না।
সব্যসাচী বুঝে গেছিল—এই সম্পর্ক নিরাপদ নয়। কোনো সুদ নেই। শুধু হিসাবের খাতা ভর্তি লেনদেন।

একদিন হঠাৎ কৃতিকা বলল,
— "তুই খুব ভালো, কিন্তু আমি তোকে ভালোবাসি না। আমি চাই এমন কেউ, যার সঙ্গে জীবনের বড়ো ঝুঁকি নিতে পারি। তোকে দিয়ে শুধু সেভিংস হয়, বিনিয়োগ নয়।"

সব্যসাচী চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিল।
সে প্রথমবার বুঝেছিল—সব নিরাপত্তাও কষ্ট দিতে পারে।

এরপর বহুদিন পর সব্যসাচীর সঙ্গে দেখা হলো রুনা ঘোষের।
রুনা একটা ছোট সরকারি চাকরিতে ছিল, প্রতিদিন নিয়ম করে একটু একটু করে আবেগ জমাতো। যেন একটা রিকরিং অ্যাকাউন্ট।
সব্যসাচী দেখল, রুনার ভালোবাসা তাড়াহুড়ো নয়—কিন্তু গভীর।
একদিন রুনা বলল,
— "তুই প্রতিদিন একটু একটু করে আমায় বুঝিস... ঠিক যেমন আমি প্রতিমাসে একটু একটু করে টাকাটা জমাই। সময় গেলে তার মূল্য বাড়ে।"

সব্যসাচী হেসে বলল,
— "তুই আসলে সুদের মতো। সময় যত যাচ্ছে, ততই জীবনের প্রতি বিশ্বাস বাড়াচ্ছিস।"

কিন্তু রুনার জীবনে আসল ট্র্যাজেডি ছিল—তার পরিবার।
বাবার চিকিৎসা, ভাইয়ের পড়াশোনা, নিজের চাকরির অনিশ্চয়তা—সব কিছুর ভেতর সে একদিন সব্যসাচীকে বলল,
— "আমার ভালোবাসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। আমাকে হয়তো কখনো সুদে-লাভে ফিরিয়ে দেবে না জীবন।"

রুনা একটা বদলি চিঠি হাতে নিয়ে চলে গেল দূর্গাপুরে।

সব্যসাচী আবার একা।

এই একাকীত্বে হঠাৎ ঈশানের দেখা।
ঈশান, পুরোনো বন্ধু। খুব ভালোবাসত একটা মেয়েকে—যাকে সে একবারেই সব দিয়ে দিয়েছিল।
একটা ফিক্সড ডিপোজিট অ্যাকাউন্টের মতো,
সব আবেগ, স্বপ্ন, আশা—তালাবদ্ধ করে জমা রেখেছিল।

ঈশান বললো,
— "আমি মেয়াদ ফুরোনোর অপেক্ষায় আছি। তখন হয়তো মেয়েটা ফিরবে। তখন আমার আবেগেও সুদ যুক্ত হবে, নয়তো সময়ের আগে প্রী-ম্যাচিউর হয়ে নিঃস্ব হয়ে যাব।"

সব্যসাচী বলেছিল,
— "তুই জানিস তো, আমি একটা সেভিংস অ্যাকাউন্ট। ধীরে ধীরে জমাই, ধীরে ধীরে ভালোবাসি। কিন্তু কেউ চায় না আমাকে। সবাই চায় লাভ—তাড়াতাড়ি, নিশ্চিত, ঝুঁকিপূর্ণ।"

দু'জনে বসেছিল সন্ধ্যাবেলায় স্পোর্টস কমপ্লেক্সের পেছনে অ্যালিতে। পাশের কাপলের মোবাইল থেকে বাতাসে ভেসে আসছিল পুরোনো রেকর্ডের গান—
"কেউ ফেরে না ফিরে, শুধু সুদের হিসাব থেকে যায়..."


চারটে ভিন্ন প্রেম, চারটা আলাদা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের মতো।
কারও ভালোবাসায় সুদ ছিল না, কারও ভালোবাসা শুধু সময় চেয়েছিল, কেউ সব দিয়ে ফেলেছিল একসাথে, কেউ ধীরে ধীরে নিজেকে নিঃশেষ করেছিল।

প্রেমের এই অর্থনীতি বুঝে ওঠার আগেই অনেকের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়।

আর তখন শুধু একটা হিসাব বাকী থাকে—
"তুমি ছিলে আমার সুদের হার। কিন্তু জমা রাখার আগে মেয়াদ পেরিয়ে গেছিল..."