গল্পের নাম: "তুমি ছিলে আমার অর্থনীতি"
✍️ সঞ্জয় আগরওয়ালা, জলপাইগুড়ি
রোশনি আর আদিত্যর গল্প।
তাদের দেখা হয়েছিল এক বনভোজনের দিন। রোশনি গাইছিল, ভরাট কণ্ঠে রবীন্দ্রসঙ্গীত — “আমার সোনার বাংলা…”
আদিত্য মুগ্ধ হয়। তার মন বলে ওঠে, “এই মেয়েটি যেন নিছক গান নয়, যেন আমার জীবনের সম্পদ।”
দিন কাটে। প্রেম গড়ায় বন্ধুত্ব থেকে অনুভবে, অনুভব থেকে ভালোবাসায়।
আদিত্য কাজ করে একটি বিজ্ঞাপন সংস্থায় — প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা অবধি, ক্লায়েন্টের জন্য লোগো ডিজাইন, ক্যাম্পেইন প্ল্যান।
সে যা করে, তা একেবারে অর্থনৈতিক কাজকর্ম — কারণ সে তার মেহনতের বিনিময়ে বেতন পায়।
আর রোশনি?
সে গায় — ঠিক যেমন বনভোজনে গেয়েছিল। কিন্তু এখন গায় শুধু আদিত্যর জন্য। তার গান বাণিজ্যিক নয়, ভালোবাসা থেকে।
এটা অন্-অর্থনৈতিক কাজকর্ম — কারণ এতে কোনো টাকাপয়সা নেই, শুধু একরাশ অনুভূতি।
এক সন্ধ্যায় তারা বসে ছিল করলা নদীর ধারে। সূর্য ডুবছে।
রোশনি বলে, “আদি, জানো? এই নদীর জল, সূর্যের আলো, বাতাস — এগুলোই আমার ভালোবাসা, অবাধলভ্য, অফুরন্ত।”
আদিত্য মুচকি হাসে। সে ভাবে — ঠিকই তো,
এই নদীর জল, সূর্যের আলো, বাতাস — সবই অবাধলভ্য দ্রব্য।
কিন্তু…
রোশনির গলা?
সেটা আর অবাধ নয়।
কারণ সে এখন টাকায় গান গায় — স্টেজ শো করে, মিউজিক চ্যানেলে চুক্তিবদ্ধ।
এখন রোশনির গান অর্থনৈতিক দ্রব্য হয়ে উঠেছে।
সময় পাল্টায়।
ভালোবাসার মাঝখানে ঢুকে পড়ে বাস্তবতা।
আদিত্য মেসেজ পাঠায় —
"তুমি এখন টাকা দিয়ে কেনা এক শিল্প।
আমি আর তোমার শ্রোতা নই।
আমার ভালোবাসা তো ছিল অবাধ… বিনামূল্যে…"
রোশনি উত্তর দেয় না।
শুধু রাতে নিজের ঘরে বসে, পিয়ানোয় ছুঁয়ে ছুঁয়ে বাজায় সেই পুরনো সুর —
“আমার সোনার বাংলা…”
নিজের জন্য, নিঃশব্দে,
আবার ফিরে যায় অন্-অর্থনৈতিক কাজকর্মে।
এই প্রেমের গল্প শুধু ভালোবাসা আর বিচ্ছেদের নয় —
এ এক পাঠশালা, যেখানে
ভালোবাসা থেকে শেখা যায় অর্থনীতি,
আর অর্থনীতি বুঝে ফেলা যায় ভালোবাসা।
একদিন আদিত্য তার ডায়েরির এক কোণে লেখে:
তুমি ছিলে আমার অর্থনীতি —
তোমায় পেতে যে মূল্য দিতে হয়,
তা কোনো টাকায় মেটেনি…
মিটেছে শুধু এক ভাঙা হৃদয়ের কান্নায়।