Welcome to the Official Web Portal of Lakshyavedh Group of Firms

গল্প: হুন্ডির লেখক (Drawer), হুন্ডির গ্রাহক (Drawer/ Acceptor) এবং হুন্ডির প্রাপকের (Payee) পারস্পরিক সম্পর্কের 3 টা মজাদার গল্প


গল্প ১: "হুন্ডির পথচলা"

জলপাইগুড়ির ব্যবসায়ী দেবযানী বসু একজন মশলার পাইকার। কলকাতার নামী খুচরা দোকান প্রেমা ট্রেডার্স-কে তিনি প্রায়ই মাল সরবরাহ করতেন। এবারও ৫ লক্ষ টাকার মশলার চালান পাঠালেন তিনি। চুক্তি অনুযায়ী, অর্থ তিন মাস পরে পরিশোধ করতে হবে। দেবযানী বসু, যিনি এই কাহিনির হুন্ডি লেখক (Drawer), তাঁর পাওনার নিশ্চয়তার জন্য হুন্ডি লিখলেন। হুন্ডিতে স্পষ্ট নির্দেশ দিলেন—

“প্রেমা ট্রেডার্স (হুন্ডি গ্রাহক অর্থাৎ Drawee), তিন মাস পরে আমার বা আমার নির্দেশিত ব্যক্তির কাছে ৫ লক্ষ টাকা পরিশোধ করবেন।”

এখন গল্পের দ্বিতীয় চরিত্র— হুন্ডি গ্রাহক (Drawee) অর্থাৎ প্রেমা ট্রেডার্স-এর মালিক প্রেমা জোশি। তিনি মশলার মাল গ্রহণ করেছেন এবং হুন্ডি গ্রহণ করলেন সই করে। সই করার পর তিনি আইনি দায়বদ্ধ হলেন—নির্দিষ্ট সময়ে অর্থ পরিশোধের জন্য।

তবে দেবযানী বসুর আরেক সমস্যা হলো, তাঁর নিজস্ব ব্যবসার জন্য তাৎক্ষণিক টাকার দরকার। তাই তিনি হুন্ডি নিয়ে ব্যাংকে গেলেন। ব্যাংক সেই হুন্ডি "ডিসকাউন্ট" করল—অর্থাৎ তিন মাসের আগে কিছু সুদ কেটে তাঁকে প্রয়োজনীয় টাকা দিয়ে দিল।

এখানেই গল্পে তৃতীয় চরিত্র হুন্ডি প্রাপক অর্থাৎ Payee-এর আগমন। এই ক্ষেত্রে ব্যাংকই হুন্ডির প্রাপক (Payee) হয়ে গেল, কারণ সময় হলে প্রেমা জোশি ব্যাংকের কাছেই টাকা পরিশোধ করবেন। তিন মাস পর প্রেমা জোশি চুক্তিমতো ব্যাংকে টাকা জমা করলেন। সবকিছু আইনি ও নিরাপদভাবে সম্পন্ন হলো।

এই গল্পে আমরা দেখতে পাচ্ছি—
Drawer: দেবযানী বসু (হুন্ডি লেখক, পাওনাদার)
Drawee: প্রেমা জোশি/ প্রেমা ট্রেডার্স (হুন্ডি গ্রাহক, দেনাদার)
Payee: ব্যাংক (হুন্ডি প্রাপক, কারণ দেবযানী বসু ব্যাংকে হুন্ডি ডিসকাউন্ট করেছেন)


গল্প ২: "হুন্ডির তিন চরিত্র"

জলপাইগুড়ির সুমন্ত রায় একজন নামী ব্যবসায়ী, স্থানীয় বাজারে চিনি সরবরাহ করে। তার ব্যবসায়িক সুনাম অনেক দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে গেছে। আজ সকালে সে তার দোকানে বসে হিসাব লিখছিল। হঠাৎই শুভজিৎ সরকার, একজন পাইকারি ব্যবসায়ী, তার কাছে এসে হাজির হলো।

শুভজিৎ সুমন্তর কাছ থেকে প্রচুর পরিমাণে চিনি কিনতে চাইল, কিন্তু সঙ্গে নগদ অর্থ ছিল না। সে বলল,
— “দাদা, আপনি কি আমাকে এক মাসের সময় দিতে পারেন? আমি ঠিক সময়মতো আপনাকে টাকা পাঠিয়ে দেব।”

সুমন্ত হাসল। সে জানে ব্যবসায়ে আস্থা গুরুত্বপূর্ণ। তাই সে একটি হুন্ডি লিখল।
এই হুন্ডির মাধ্যমে সুমন্ত রায় হুন্ডি লেখক অর্থাৎ Drawer, কারণ সে হুন্ডি ইস্যু করছে। হুন্ডিতে লেখা হলো যে শুভজিৎ সরকার (যার নামে হুন্ডি ইস্যু হলো) নির্দিষ্ট তারিখে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দেবে। এইভাবে শুভজিৎ সরকার হলো হুন্ডি গ্রাহক অর্থাৎ Drawee, কারণ তাকে অর্থ প্রদান করতে হবে।

হুন্ডিতে Payee হিসেবে সুমন্ত রায়ের নিজের নামই লেখা হলো। মানে হুন্ডির টাকা নির্দিষ্ট তারিখে শুভজিৎ সুমন্তকেই দেবে।

কিছুদিন পর সুমন্তর তৎকালীন নগদের দরকার ছিল। তাই সে হুন্ডিটি নিজের ব্যাংকে দিয়ে দিল Bills for Collection হিসেবে। ফলে এবার ব্যাংক হলো হুন্ডি প্রাপক অর্থাৎ Payee, কারণ হুন্ডির টাকা নির্দিষ্ট তারিখে ব্যাংক পাবে, সুমন্ত নয়।

দিন গেল, সময়মতো শুভজিৎ সরকার তার ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থ মিটিয়ে দিল। ব্যবসায়িক সম্পর্ক মজবুত হলো।

এই গল্পে দেখা যায়—
✓ সুমন্ত রায় প্রথমে Drawer এবং প্রথম Payee ছিল।
✓ শুভজিৎ সরকার ছিল Drawee, যে হুন্ডি গ্রহণের পর অর্থ প্রদানে বাধ্য হলো।
✓ পরে ব্যাংক Payee হলো, কারণ সুমন্ত হুন্ডি ব্যাংকের কাছে কালেকশনের জন্য দিল।


গল্প ৩: “হুন্ডির কাগজে বাঁধা সম্পর্ক”

জলপাইগুড়ির ব্যস্ত ব্যবসায়ী সুরজ চৌধুরী (Drawer) চিনি ও গুড়ের বড় ব্যবসা করতেন। কলকাতার নামী এক দোকান দে অ্যান্ড সন্স (Drawee) তার কাছ থেকে প্রচুর পরিমাণ পণ্য কিনল, কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে নগদ টাকা দিল না। সুরজবাবু জানতেন, ব্যবসার নিয়মে অনেক সময় পরিশোধ পরে হয়। তাই তিনি একটি হুন্ডি লিখলেন—

“আমি, সুরজ চৌধুরী, নির্দেশ দিচ্ছি যে দে অ্যান্ড সন্স ৩০ দিনের মধ্যে ৫ লক্ষ টাকা অভিলাষা মুন্সীকে (Payee) প্রদান করবে।”

এখানে দে অ্যান্ড সন্স-এর নাম হুন্ডিতে লিখে তাদের অর্থ প্রদানের নির্দেশ দেওয়া হলো।

কিন্তু অভিলাষা মুন্সী কে? সুরজবাবুর নিজের স্ত্রী নন, বরং তার একজন পাওনাদার (Creditor)। সুরজবাবুর আগে থেকেই অভিলাষা মুন্সীর কাছে কিছু ঋণ ছিল। তাই সুরজবাবু ঠিক করলেন, দে অ্যান্ড সন্স থেকে যে টাকা পাওনা, তা সরাসরি অভিলাষার (Endorse) কাছে পৌঁছে যাবে।

দে অ্যান্ড সন্স হুন্ডি গ্রহণ করে সিগনেচার করল। সিগনেচার করার পর তারা আইনি দিক থেকে হুন্ডি গ্রাহক (Drawee বা Acceptor) এবং বাধ্য যে নির্দিষ্ট সময়ে অভিলাষাকে টাকা দেবে। দিন গড়াল। ৩০ দিন পর দে অ্যান্ড সন্স যথাসময়ে অভিলাষাকে ৫ লক্ষ টাকা প্রদান করল। ফলে—
✓ সুরজবাবুর দেনা শোধ হল।
✓ অভিলাষা পেলেন তার পাওনা টাকা।
✓ দে অ্যান্ড সন্স ব্যবসার দায়িত্ব পালন করল।

এইভাবেই একটি কাগজের মাধ্যমে তিনজনের সম্পর্ক দৃঢ় হলো—Drawer (সুরজ চৌধুরী), Drawee (দে অ্যান্ড সন্স) এবং Payee (অভিলাষা মুন্সী)।

এই তিনটি গল্প থেকে বোঝা যায়, Drawer হুন্ডি লেখে ও নির্দেশ দেয়, Drawee অর্থ প্রদান করে আর Payee অর্থ গ্রহণ করে। বাস্তব জীবনে Payee অনেক সময় Drawer নিজেই হতে পারে, আবার Drawer-এর পাওনাদার বা ব্যাংকও হতে পারে।