Welcome to the Official Web Portal of Lakshyavedh Group of Firms

গল্প: হুন্ডির তিন রূপ


জলপাইগুড়ির ব্যস্ত বাজার। বিকেলের লালচে রোদ আর মশলার তীব্র গন্ধে ভরে আছে পরিবেশ। সঞ্জয় গর্গ – এলাকার পরিচিত মশলার ব্যবসায়ী। সাদা পাঞ্জাবি-পাজামা, চোখে সোনালী ফ্রেমের চশমা, কিন্তু ব্যবসার বুদ্ধিতে শেয়ালের মতো চতুর। একদিন দোকানে বসে খাতা লিখছিলেন। তার ভাইপো সুরজ – বাণিজ্যের ছাত্র, মামার কাছে শিখছে হিসাব-ব্যবসার খুঁটিনাটি।

সুরজ অবাক হয়ে বলল: “মামা, আপনি এত হুন্ডি লেখেন! কিন্তু এই সব ‘দর্শনমাত্র’, ‘তারিখ অন্তে’, ‘দর্শনান্তে’ – এগুলোর পার্থক্যটা ঠিক বুঝি না।”

সঞ্জয় মুচকি হেসে বললেন: “শোন, তুই তো সিনেমা ভালোবাসিস? তাহলে সিনেমার মতো তিনটা দৃশ্যে বুঝিয়ে দিই। ব্যবসার দুনিয়ায় সময়ের সাথে খেলা করা – এটাই হুন্ডির আসল খেলা।”

প্রথম দৃশ্য: দর্শনমাত্র দেয় হুন্ডি [Bill at Sight] বা দাবিমাত্র দেয় হুন্ডি [Bill at Demand] - দাবি করলেই টাকা।

সঞ্জয়ের দোকানে হঠাৎ কলকাতার গ্রাহক শামীম ট্রেডার্স এল। মালপত্রের দাম ১ লক্ষ টাকা। কিন্তু নগদ দিল না। সঞ্জয় দ্রুত হুন্ডি লিখলেন— “উপস্থাপন বা দাবি করলেই টাকা প্রদানযোগ্য।”

সুরজ চমকে উঠে বলল: “মামা, কোনো তারিখ নেই!”

সঞ্জয় হেসে উত্তর দিলেন: “তারিখের দরকার নেই। যখনই শামীমকে হুন্ডি উপস্থাপন করা হবে, তখনই তাকে টাকা দিতে হবে। এটা হলো দর্শনমাত্র বা দাবিমাত্র হুন্ডি। ব্যবসার দুনিয়ায় চেকও এরকমই কাজ করে।”

সুরজ মাথা নেড়ে বলল: “দাবি করলেই পেমেন্ট? দারুণ!”

দ্বিতীয় দৃশ্য: তারিখ অন্তে দেয় হুন্ডি [Bill after Date] - লেখার তারিখ থেকে সময় গণনা।

কিছুদিন পর নতুন গ্রাহক "অর্ণব এজেন্সি" এল। ১৫ই জানুয়ারি ২০২৫ তারিখে হুন্ডি লেখা হলো ৫০ হাজার টাকার, শর্ত – “২ মাস পরে প্রদানযোগ্য”।

সুরজ আবার জিজ্ঞেস করল: “মামা, এবার তারিখ লেখা আছে, কিন্তু পেমেন্ট কবে?”

সঞ্জয় বললেন: “হুন্ডি লেখার দিন থেকেই মেয়াদ শুরু হবে। ১৫ জানুয়ারির সাথে ২ মাস যোগ কর আর আইন অনুযায়ী আরও ৩ দিনের গ্রেস পিরিয়ড। তখনই হবে মেয়াদপূর্তির দিন। এটাকেই বলে তারিখ অন্তে হুন্ডি।”

তৃতীয় দৃশ্য: দর্শনান্তে দেয় হুন্ডি [Bill after Sight] - স্বীকৃতির তারিখ থেকে সময় গণনা।

মাস শেষে "মৌসুমি এন্টারপ্রাইজেস" সঞ্জয়ের দোকানে এল। মাল নিল কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে মালের টাকা দিল না। কিছুদিন পর, ২০শে ফেব্রুয়ারি সে এসে হুন্ডিতে স্বাক্ষর করল। শর্ত – “৩০ দিনের মধ্যে প্রদানযোগ্য।”

সুরজ কৌতূহলী হয়ে উঠল: “মামা, এবার কি লেখার দিন থেকে সময় শুরু হবে?”

সঞ্জয় মাথা নাড়িয়ে বললেন: “না রে! এখানে সময় শুরু হবে যেদিন মৌসুমি হুন্ডিতে স্বীকৃতি দিল – ২০শে ফেব্রুয়ারি থেকে। সেদিনের সাথে ৩০ দিন আর অতিরিক্ত ৩ দিন যোগ করলেই হবে মেয়াদপূর্তির তারিখ। এটা হলো দর্শনান্তে হুন্ডি।”

সঞ্জয় চায়ের কাপে চুমুক দিলেন, সুরজ গভীর মনোযোগে শুনল।

সঞ্জয়: “দেখলি তো, সময়ের সূচনা আর দাবির ধরনই হুন্ডির প্রকার নির্ধারণ করে। এটা শুধু কাগজ নয়, ব্যবসার আস্থার দলিল।”

সুরজ যেন সিনেমার হিরোর মতো মাথা নেড়ে বলল: “মামা, এখন বুঝলাম, ব্যবসার জগতে সময়ই আসল মূলধন!”