Welcome to the Official Web Portal of Lakshyavedh Group of Firms

গল্প: হিসাবনিকাশের সমীকরণের রহস্য


জলপাইগুড়ির শহরে "লক্ষ্যভেদ" নামে একটি ব্যবসা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, যেখানে সঞ্জয় গর্গ নতুন নতুন উদ্যোক্তাদের ব্যবসার কৌশলের খুঁটিনাটির প্রশিক্ষণ দেন। একদিন সেখানে এল শর্মিলা—অতি সাধারণ এক তরুণী, ব্যবসার খুঁটিনাটি সম্পর্কে যার কোনো ধারণাই নেই। সে শুধু জানত, ব্যবসায় টাকা লাগে আর লাভ-ক্ষতি হয়। ক্লাসে প্রবেশ করে সে দেখল বোর্ডে বড় বড় অক্ষরে লেখা:
“সম্পত্তি = স্বত্বাধিকার (মূলধন + দায়)”

শর্মিলা চমকে উঠল, “স্যার, এটা কী ধরনের সমীকরণ? এখানে তো যোগ-বিয়োগ আছে, কিন্তু টাকা-পয়সার সাথে এর সম্পর্ক কী?”

সঞ্জয় মৃদু হেসে বললেন, “শর্মিলা, ব্যবসা মানে শুধু টাকা গোনা নয়। ব্যবসার প্রতিটি টাকার হিসাব কোথা থেকে আসছে আর কোথায় যাচ্ছে, তার একটা বৈজ্ঞানিক ভাষা আছে। সেটাই হিসাবনিকাশের সমীকরণ।”

শর্মিলা কৌতূহলী হয়ে জিজ্ঞেস করল, “তাহলে এই স্বত্বাধিকার মানে কী?”

সঞ্জয় বোঝাতে শুরু করলেন, “স্বত্বাধিকার দু’ভাগে ভাগ হয়—মালিকের স্বত্বাধিকার আর বহিরাগতদের স্বত্বাধিকার। ধরো, তুমি নিজের ৫০,০০০ টাকা দিয়ে দোকান খুললে, সেটা তোমার মালিকের স্বত্বাধিকার বা মূলধন। আর যদি ব্যাংক থেকে ৩০,০০০ টাকা ঋণ নাও, সেটা বহিরাগতদের স্বত্বাধিকার বা দায়। এই দুই দাবির যোগফলই তোমার ব্যবসার মোট সম্পত্তি।”

শর্মিলা অবাক হয়ে বলল, “তাহলে আমার দোকানের মালপত্র আর নগদ মিলে মোট ৮০,০০০ টাকার সম্পত্তি হবে? আর সেই ৮০,০০০-এর পেছনে আছে আমার নিজের দাবিও আর ব্যাংকের দাবিও?”

সঞ্জয় মাথা নাড়লেন, “ঠিক তাই। আর এটিই মূল সমীকরণ:
Assets = Owner’s Equity + Outsider’s Equity
অর্থাৎ, সম্পত্তি = মালিকের স্বত্বাধিকার + বহিরাগতদের স্বত্বাধিকার
অথবা, সম্পত্তি = মূলধন + দায়

যদি ব্যবসায় লাভ করো, তোমার মালিকের স্বত্বাধিকার বাড়বে, আর ক্ষতি করলে কমবে। তাই প্রতিটি লেনদেন এই সমীকরণকে প্রভাবিত করে।”

শর্মিলা চোখে নতুন আলো জ্বলে উঠল। সে বুঝল, ব্যবসা শুধু কেনাবেচা নয়, বরং প্রতিটি টাকার পেছনে একটা গল্প আছে—কোথা থেকে এসেছে আর কার ওপর তার দাবি।

ক্লাস শেষে শর্মিলা নিজের মনে হাসল, “আগে ভাবতাম সমীকরণ মানে শুধু অঙ্কের খেলা। আজ বুঝলাম, এটি জীবনের মতোই—যেখানে সবকিছুর একটা ভারসাম্য থাকে।”

এইভাবেই শর্মিলার ব্যবসার পথে প্রথম পাঠ শুরু হয় আর সে বুঝে যায় "হিসাবনিকাশের সমীকরণ কেবল নিয়ম নয়, বরং ব্যবসার হৃদস্পন্দন"।

দিন গড়াল। শর্মিলার দোকান জমে উঠল। এক মাসে শর্মিলা ২০,০০০ টাকা লাভ করল। আনন্দে সে তার সেই প্রশিক্ষককে ফোন করলে সঞ্জয় তাকে বলল,
“লাভ হলে মালিকের স্বত্বাধিকার বাড়ে। এখন তোমার সমীকরণ দাঁড়াবে:
সম্পত্তি = (মূলধন + লাভ) + দায়
অর্থাৎ, 
সম্পত্তি = (৫০,০০০ + ২০,০০০) + ৩০,০০০ = ১,০০,০০০ টাকা

পরের মাসে বাজারে মন্দা এল। শর্মিলার ১০,০০০ টাকা ক্ষতি হলো। মন খারাপ করে সে আবার তার সেই প্রশিক্ষককে ফলে করে। এবার সঞ্জয় তাকে বোঝায়,
“ক্ষতি হলে মালিকের স্বত্বাধিকার কমে। এখন তোমার সমীকরণ হবে:
সম্পত্তি = (মূলধন – ক্ষতি) + দায়
অর্থাৎ,
সম্পত্তি = (৫০,০০০ + ২০,০০০ – ১০,০০০) + ৩০,০০০ = ৯০,০০০ টাকা

শর্মিলা বুঝল—ব্যবসা যেভাবেই চলুক না কেন, হিসাবের সমীকরণ সবসময় ভারসাম্যে থাকে।