Welcome to the Official Web Portal of Lakshyavedh Group of Firms

গল্পের নাম: “জোগানের সেই অসম প্রেম”


গল্পের নাম: “জোগানের সেই অসম প্রেম”
✍️ সঞ্জয় আগরওয়ালা, জলপাইগুড়ি

প্রথম পর্ব: দুই জগতের দুই মানুষ
শহরের এক কোণে পুরনো কাঁচা রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে অনিরুদ্ধর ছোট্ট একটা চায়ের দোকান—নাম রাখা ছিল "চায়ের ফাঁকে..."। দোকানটার চারপাশে ধূলো জমে, কিন্তু তার মনের কোণে জমে থাকা আবেগ ছিল ঝকঝকে।
চা, বিস্কুট আর পুরোনো দিনের ক্যাসেট বাজিয়ে কাটাতো দিন। কেউ বলত—ভবিষ্যত নেই, সে বলত—ভবিষ্যতের তো মুখ নেই, কে জানে কবে কী!

আর মেয়েটির নাম কৃতিকা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকোনমিক্স ডিপার্টমেন্টের টপার। চোখে ছিল স্বপ্নের চশমা—প্রফেসর হবে, সমাজ বদলাবে, যুক্তির আলোয় পথ দেখাবে পৃথিবীকে।

দুই জগত। একে অপরের ঠিক বিপরীত।
তবু তো গল্প শুরু হয়েছিল এক কাপ চায়ের মধ্যে…

দ্বিতীয় পর্ব: প্রথম দেখা, চায়ের কাপ আর 'Law of Supply'
সেদিন বিকেলে কৃতিকা হাঁটছিল ক্যাম্পাসের পাশের রাস্তায়।
হাতে বই, চোখে পড়ার চশমা, মুখে নির্লিপ্ততা।
চা খেতে এসে দাঁড়িয়েছিল অনিরুদ্ধর দোকানে। অনিরুদ্ধ, তখন সবে জল ফোটাচ্ছে—হাতে ধরা ক্যাসেট প্লেয়ারে বাজছে মান্না দে’র গান—
"কফি হাউসের সেই আড্ডাটা..."

কৃতিকার চোখে এক চিলতে হাসি।
অনিরুদ্ধ কৌতূহল নিয়ে জিজ্ঞেস করল,
— “আপনি কি কলেজের প্রফেসর?”
— “না, পড়ি এখনও। ইকোনমিক্স।”
— “ওহ! Supply আর Demand-এর সেই কঠিন অঙ্ক!”

কৃতিকা হেসে বলেছিল,
— “না অতটাও কঠিন নয়। ধরুন—'Law of Supply' বলছে, অন্যান্য নির্ধারক অপরিবর্তিত থাকলে, দ্রব্যের দাম বাড়লে তার জোগান বাড়ে। দাম কমলে জোগান কমে—simple logic।”

অনিরুদ্ধ হঠাৎ বলল,
— “তবে আমি তো দেখি দাম যত বাড়ছে, মানুষ ততই দূরের হয় যাচ্ছে।
আমার তো মনে হয়, আমি জোগানের সেই ব্যতিক্রম…”

কৃতিকার চোখ তখন খানিক থমকে গেছিল। সে কিছু না বলে চলে গিয়েছিল।

তৃতীয় পর্ব: প্রেমের অঙ্ক - Demand কম কিন্তু Supply বেশি
এরপরও দেখা হতে থাকলো।
প্রতিদিন একটা করে চায়ের কাপ পৌঁছে যেত কৃতিকাকে—তখনও অনিরুদ্ধ বলতো না, কিন্তু ভালোবাসত নিঃশব্দে।
কৃতিকা বুঝতো, কিন্তু চুপ থাকত—কারণ জীবনের অঙ্কে এমন ভালোবাসা মেলানো কঠিন।

ওদিকে, সমাজ বলছে—
“কৃতিকা তো ভবিষ্যতের রত্ন, অনিরুদ্ধ তো একটা চা-ওয়ালা!”

কিন্তু অনিরুদ্ধ ভাবত,
"Demand যাই হোক, আমি আমার Supply কমাবো না। কারণ এ জোগান মনের..."

চতুর্থ পর্ব: নতুন দামের মূল্য - জীবনের চাকরি ও সম্পর্কের ইস্তফা
কয়েক বছর পর কৃতিকার ডাক পড়ল বিদেশে—PhD করতে।
তার জীবন বদলে গেল। পদমর্যাদা, সম্মান, বেতন—সব বাড়ল।
Price বাড়ল কৃতিকার জীবনের—তখন সে বুঝতে পারল, তার চারপাশে অনেক “দামী” মানুষ।

এক সন্ধ্যায় এসে অনিরুদ্ধর দোকানে দাঁড়াল কৃতিকা।
অনিরুদ্ধ হাসিমুখে চা এগিয়ে দিল—কিন্তু কৃতিকার চোখে কোনো আবেগের আলো নেই।

সে বলল—
— “অনিরুদ্ধ, আমাদের সম্পর্কটা আর চলতে পারবে না। তুমি তো বদলাওনি কিছুই। তুমি এখনও সেই ৫ টাকার চা... আর আমি এখন ডলারের খাতায় হাঁটি।”

অনিরুদ্ধ কাঁপা গলায় বলল—
— “তুই যতই দাম বাড়াস... আমি তোর জন্য জোগান দিতেই থাকব।
‘Law of Supply’ বলে দাম কমলে জোগান কমে—
কিন্তু আমি তো ব্যতিক্রম, কৃতিকা।
তোর ভালোবাসা যতই কমুক, আমার Supply এক ফোঁটাও কমবে না।”

কৃতিকার চোখে এক মুহূর্তের জল এসে আবার মিলিয়ে গেল। সে ফিরে গেল তার গন্তব্যে—ছেড়ে গেল অনিরুদ্ধকে।

পঞ্চম পর্ব: ব্যতিক্রমের দোকান - Supply আছে, Buyer নেই
সেই রাতটা বড় নিঃশব্দ ছিল।

অনিরুদ্ধ দোকানের এক কোণে একটা বোর্ড টাঙিয়ে দিল:

🪧 "এই দোকানে জোগানের নিয়ম চলে না।
দামে লাভ নেই, তবু জোগান আছে।
যারা ভালোবাসা বোঝে, তারাই বুঝবে।"

লোকেরা দেখে হাসত।
কেউ কেউ বলত—"পাগল!"
কেউ বলত—"Heartbroken economics!"
কিন্তু অনিরুদ্ধ প্রতিদিন সেই এক কাপ চা বানিয়ে রাখত।
সেই চায়ের কাপ, যার ক্রেতা ছিল না, কিন্তু ভালোবাসা ছিল উপচে পড়া।

ষষ্ঠ পর্ব: ভালোবাসার মুদ্রাস্ফীতি
বছর পাঁচেক পর এক বিদেশি ম্যাগাজিনে কৃতিকার সাক্ষাৎকার বেরোয়।
সে বলেছিল—
“আজ আমি ডলার ছুঁই, তবু হৃদয়ে এখনো একটি পুরনো চায়ের দোকান বাজে...
যেখানে Supply কমেনি কোনোদিন, Demand ফুরিয়ে গেলেও…”

🎭 শেষকথা:
💔 এই গল্প লাভের অঙ্ক নয়,
এটা হৃদয়ের ক্ষতির হিসেব।
এটা সেই ভালোবাসা—যেখানে দাম নেই, তবু জোগান পূর্ণ।

"জোগানের নিয়ম বলে দাম বাড়লে জোগান বাড়ে...
কিন্তু প্রেম?
প্রেম হলো সেই চায়ের দোকান,
যেখানে Buyer চলে গেলেও Supplier অপেক্ষা করে আজীবন।" 🙂